সামাজিকীকরণ বলতে কি বুঝায়?

Admin

 সামাজিকীকরণ হল একটি প্রক্রিয়া যার মাধ্যমে ব্যক্তি সমাজের নিয়ম, মূল্যবোধ, সংস্কৃতি এবং আচরণগত মানদণ্ড শেখে এবং অভ্যন্তরীণ করে। এটি ব্যক্তিকে সমাজের একটি কার্যকর ও সংহত সদস্য হিসেবে গড়ে তোলে। সামাজিকীকরণ শুধুমাত্র শৈশবেই সীমাবদ্ধ নয়, বরং এটি সারাজীবন ধরে চলমান একটি প্রক্রিয়া। পরিবার, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান, বন্ধু এবং গণমাধ্যম সামাজিকীকরণের প্রধান মাধ্যম হিসেবে কাজ করে।

সামাজিকীকরণের বৈশিষ্ট্য

সামাজিকীকরণের কয়েকটি প্রধান বৈশিষ্ট্য রয়েছে:

  1. জীবনব্যাপী প্রক্রিয়া: সামাজিকীকরণ শৈশব থেকে শুরু হয়ে সারাজীবন ধরে চলতে থাকে।

  2. শিখন প্রক্রিয়া: ব্যক্তি সমাজের নিয়ম, মূল্যবোধ এবং আচরণ শেখে।

  3. সাংস্কৃতিক হস্তান্তর: সামাজিকীকরণের মাধ্যমে এক প্রজন্ম থেকে অন্য প্রজন্মে সংস্কৃতি হস্তান্তরিত হয়।

  4. ব্যক্তিত্ব গঠন: সামাজিকীকরণ ব্যক্তির ব্যক্তিত্ব, আচরণ এবং বিশ্বাস গঠনে সাহায্য করে।

সামাজিকীকরণের প্রকারভেদ

সামাজিকীকরণকে প্রধানত দুই ভাগে ভাগ করা যায়:

  1. প্রাথমিক সামাজিকীকরণ: শৈশবে পরিবারের মাধ্যমে যে সামাজিকীকরণ শুরু হয়। এটি ব্যক্তির ব্যক্তিত্ব ও মূল্যবোধ গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

  2. দ্বিতীয়ক সামাজিকীকরণ: প্রাপ্তবয়স্ক হওয়ার পর শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, কর্মক্ষেত্র এবং সমাজের অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে যে সামাজিকীকরণ ঘটে।

সামাজিকীকরণের মাধ্যম

সামাজিকীকরণের বিভিন্ন মাধ্যম রয়েছে, যার মাধ্যমে ব্যক্তি সমাজের নিয়ম ও মূল্যবোধ শেখে:

  1. পরিবার: পরিবার হল সামাজিকীকরণের প্রথম এবং প্রধান মাধ্যম। শিশু পরিবার থেকে ভাষা, আচরণ এবং মূল্যবোধ শেখে।

  2. শিক্ষা প্রতিষ্ঠান: স্কুল, কলেজ এবং বিশ্ববিদ্যালয় সামাজিকীকরণের গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিশু সমাজের নিয়ম, শৃঙ্খলা এবং সহযোগিতা শেখে।

  3. ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান: ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান ব্যক্তির নৈতিক ও আধ্যাত্মিক মূল্যবোধ গঠনে সাহায্য করে।

  4. বন্ধু ও সহকর্মী: বন্ধু এবং সহকর্মীদের কাছ থেকে ব্যক্তি সামাজিক আচরণ এবং সম্পর্ক গঠনের দক্ষতা শেখে।

  5. গণমাধ্যম: টেলিভিশন, ইন্টারনেট, সোশ্যাল মিডিয়া এবং সংবাদপত্র সামাজিকীকরণের আধুনিক মাধ্যম। গণমাধ্যম ব্যক্তির বিশ্বাস, মনোভাব এবং আচরণকে প্রভাবিত করে।

সামাজিকীকরণের গুরুত্ব

সামাজিকীকরণ ব্যক্তি এবং সমাজ উভয়ের জন্যই অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ:

  1. ব্যক্তিত্ব গঠন: সামাজিকীকরণ ব্যক্তির ব্যক্তিত্ব, আচরণ এবং বিশ্বাস গঠনে সাহায্য করে।

  2. সামাজিক সংহতি: সামাজিকীকরণ সমাজের সদস্যদের মধ্যে সংহতি এবং একতা বজায় রাখে।

  3. সংস্কৃতি সংরক্ষণ: সামাজিকীকরণের মাধ্যমে এক প্রজন্ম থেকে অন্য প্রজন্মে সংস্কৃতি হস্তান্তরিত হয়।

  4. সামাজিক নিয়ম মেনে চলা: সামাজিকীকরণ ব্যক্তিকে সমাজের নিয়ম এবং মূল্যবোধ মেনে চলতে শেখায়।

সামাজিকীকরণের চ্যালেঞ্জ

সামাজিকীকরণ প্রক্রিয়ায় কিছু চ্যালেঞ্জ রয়েছে:

  1. সাংস্কৃতিক দ্বন্দ্ব: বিভিন্ন সংস্কৃতির মধ্যে দ্বন্দ্ব সামাজিকীকরণ প্রক্রিয়াকে জটিল করে তুলতে পারে।

  2. গণমাধ্যমের প্রভাব: গণমাধ্যমের নেতিবাচক প্রভাব সামাজিকীকরণ প্রক্রিয়াকে ব্যাহত করতে পারে।

  3. পরিবারের ভূমিকা: পরিবারের ভূমিকা কমে যাওয়া সামাজিকীকরণ প্রক্রিয়াকে দুর্বল করে তুলতে পারে।

উপসংহার

সামাজিকীকরণ হল একটি অবিচ্ছেদ্য প্রক্রিয়া যা ব্যক্তিকে সমাজের একটি কার্যকর ও সংহত সদস্য হিসেবে গড়ে তোলে। এটি ব্যক্তির ব্যক্তিত্ব গঠন, সামাজিক নিয়ম মেনে চলা এবং সংস্কৃতি সংরক্ষণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। সামাজিকীকরণের মাধ্যমে ব্যক্তি সমাজের সাথে খাপ খাইয়ে নেয় এবং সমাজের উন্নতি ও অগ্রগতিতে অবদান রাখে।


Rate This Article

Thanks for reading: সামাজিকীকরণ বলতে কি বুঝায়?, Stay tune to get latest Blogging Tips.

Getting Info...

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Cookie Consent
We serve cookies on this site to analyze traffic, remember your preferences, and optimize your experience.
Oops!
It seems there is something wrong with your internet connection. Please connect to the internet and start browsing again.
AdBlock Detected!
We have detected that you are using adblocking plugin in your browser.
The revenue we earn by the advertisements is used to manage this website, we request you to whitelist our website in your adblocking plugin.
Site is Blocked
Sorry! This site is not available in your country.